পুতিনকে লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার হামলার চাঞ্চল্য

রাশিয়ার আকাশে আগুনের লাল আলো ও বিস্ফোরণের গর্জনে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা। পুতিনের হেলিকপ্টারে সম্ভাব্য হামলার খবরে দানা বাঁধছে রহস্য ও আতঙ্ক। বিস্তারিত জানুন এই নাটকীয় ঘটনার গভীরে।


সেই রাতে রাশিয়ার আকাশে যেন থমথমে নীরবতা নেমে এসেছিল। মস্কো শহর থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, যেখানে গাছের ডালে বাতাসের হালকা দোল, হঠাৎই ছিন্নভিন্ন করে দেয় এক যুদ্ধঘণ্টার গর্জন। সময়টা ছিল গভীর রাত—২৬ মে ২০২৫, স্থানীয় সময় রাত ১টা ৪০ মিনিট।

প্রথম খবর আসে Meduza নিউজ পোর্টাল থেকে—রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি হেলিকপ্টার বহরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। একাধিক সশস্ত্র ড্রোন হানা দিয়েছে বহরের ওপর। এই হামলা যেন রাশিয়ার আকাশে নতুন এক আতঙ্ক ছড়িয়ে দিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কি পুতিনের ক্ষমতার ঘরে আঘাত হানার সূচনা?

প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তবে ওই হেলিকপ্টার বহরে তার নিরাপত্তা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা ছিলেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, অজানা ড্রোন দল আচমকাই আক্রমণ চালায়, যার ফলে হেলিকপ্টারটি বাধ্য হয়ে জরুরি অবতরণ করে। হতাহতের নির্দিষ্ট তথ্য এখনো অজানা, তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণ ও ধোঁয়ার কুন্ডলী আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।

হামলার পেছনে ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীর হাত আছে কিনা, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। যদিও ইউক্রেনের সামরিক সূত্র হামলার দায় অস্বীকার করেছে—এ খবর নিশ্চিত করেছে Reuters এবং The Guardian। রুশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে, “রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন এবং আমরা সব রকম হুমকির জন্য প্রস্তুত।”

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই হামলার উদ্দেশ্য কী ছিল? কৌশলগত বার্তা না রাজনৈতিক ইঙ্গিত? বিশ্লেষক সংস্থা Bellingcat-এর মতে, অভ্যন্তরীণ কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পুতিন প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর—এই ঘটনাই সেই প্রশ্ন সামনে এনেছে।

মস্কোর সকাল শুরু হয়েছিল এক অদ্ভুত স্তব্ধতায়। সরকারি মিডিয়া শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত বিবৃতি প্রচার করে, কিন্তু টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলিতে হামলার ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী কৃষক সের্গেই ইয়াকুশেভ বলেন, “রাতের আকাশে আগুনের লাল আলো দেখে মনে হচ্ছিল যুদ্ধ যেন আমাদের দোয়েল পাখির গাঁয়েও নেমে এসেছে।”

এই ঘটনার পর মস্কোতে নিরাপত্তা আরও কঠোর হয়েছে। ক্রেমলিনের চারপাশে সেনাদের টহল দ্বিগুণ করা হয়েছে। আশঙ্কা আর অস্ত্রের শব্দ যেন এখন রাশিয়ার বাতাসে মিশে আছে।

ঘটনার আসল কারণ এখনো ধোঁয়াশায় ঢাকা, কিন্তু এক জিনিস পরিষ্কার—রাশিয়ার আকাশে এখনো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সংঘর্ষের পদধ্বনি। জনগণের মনে প্রশ্ন—এই কি কেবল শুরু, নাকি আরও বড় কিছু আসছে সামনে?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version