অর্থনৈতিক কাঠামোতে পরিবর্তন, অর্থ মন্ত্রণালয়

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিগগিরই অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। এটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও বাজেট বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সংশোধনের মাধ্যমে নীতিমালা আরও যুগোপযোগী ও কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে আমাদের সংবাদ প্রতিবেদন পড়ুন।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক ও কর ক্যাডারের স্বার্থ সংরক্ষণ করে রাজস্ব নীতি এবং বাস্তবায়ন বিভাগকে পৃথক করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে গঠন করা হবে, তা এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশে সংশোধন আনা হবে।

এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অর্থ উপদেষ্টা মঙ্গলবারের বৈঠকে বলেছেন—রাজস্ব নীতির সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশে পরিবর্তন আনা হবে এবং তা কার্যকর করা হবে। এমন ইতিবাচক অগ্রগতি থাকা সত্ত্বেও ঐক্য পরিষদের নতুন করে অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণার যৌক্তিকতা নেই।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, অধ্যাদেশ কার্যকরের জন্য একাধিক ধাপ পেরোতে হবে—যেমন দুইটি নতুন বিভাগ গঠনের জন্য প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি, পদ সৃষ্টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, সচিব কমিটির সম্মতি এবং প্রচলিত আইন ও বিধিতে সংশোধন। ফলে এই পুরো প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ, তাৎক্ষণিকভাবে এনবিআর বিলুপ্তির সম্ভাবনা নেই।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার এনবিআরের দুই সাবেক সদস্যের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে ঐক্য পরিষদের প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়। তবে, শেষ মুহূর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার না করে কাজে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এতে আবারও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, অধ্যাদেশটি সংশোধন করে বাস্তবায়নের কাজ ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে। এনবিআরের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা বর্তমান কাঠামোতে দায়িত্ব পালন করবেন।

সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, শুল্ক ও কর ক্যাডারের কোনো পদ বা পদবি কমানো হবে না। বরং সংস্কারের ফলে পদ সংখ্যা বাড়বে এবং সচিবসহ উচ্চপদে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষে বলা হয়েছে, দেশের স্বার্থে, অর্থবছরের শেষ সময়ে বাজেট প্রক্রিয়া ও রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়।


গর্ভের সন্তানকে অস্বীকার করে তালাক দিলেন তালহা

হ্যাপির গর্ভাবস্থার খবর শুনেই তালহা তাকে তালাক দিয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পিছনের গল্প, হ্যাপির বর্তমান অবস্থা এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া জানুন। বিবাহিত জীবনের এমন নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তের প্রভাব ও আইনি দিকগুলো নিয়ে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন পড়ুন।


সাবেক মডেল ও অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি তার স্বামী তালহা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে তালহা তাদের কন্যা সন্তান আরোয়াকে অস্বীকার করেছেন এবং গর্ভাবস্থায় তাকে তালাক দিয়েছেন।

হ্যাপির প্রধান অভিযোগসমূহ:

  • স্বামী তাদের কন্যাকে নিজের সন্তান হিসেবে স্বীকার করেননি
  • গর্ভাবস্থায় তাকে তালাক দিয়েছেন
  • সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করার হুমকি দিয়েছেন
  • কন্যাকে দেখতে যাননি মাত্র ৩-৪ বার
  • তার উপার্জিত অর্থ ও সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন

হ্যাপি বলেন, “তালহা মাসে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতেন। আমার উপার্জন দিয়ে বছরগুলো কাটিয়েছেন, এখন আমার মোবাইল পর্যন্ত নিয়ে গেছেন।

তিনি আরও যোগ করেন, “আমি বারবার বলেছি সন্তানের জন্য স্ত্রীকে রাখতে, কিন্তু তিনি বলতেন সন্তানটি তার মায়ের মতো দেখতে, তাই পছন্দ হয় না।”


পররাষ্ট্র সচিব পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন জসীম উদ্দিন

পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন তার দায়িত্ব ছাড়ছেন। তার বিদায়ের কারণ, সম্ভাব্য উত্তরসূরি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানুন। এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের বিস্তারিত তথ্য ও বিশ্লেষণ পেতে আমাদের প্রতিবেদন পড়ুন।


বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন আগামী কয়েকদিনের মধ্যে স্বেচ্ছায় তার দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট করেন যে এটি কোনো বরখাস্ত বা অপসারণ নয়, বরং স্বেচ্ছাপ্রণোদিত পদত্যাগ।

পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন তার দায়িত্ব ছাড়ছেন : ফাইল ছবি

তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “পররাষ্ট্র সচিব নিজস্ব কিছু কারণে দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি এখনও সরকারি চাকরিতে রয়েছেন, শুধু দায়িত্ব বদল হবে।”

সম্প্রতি কূটনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছিল যে জসীম উদ্দিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিতির কারণে তাকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। গত সপ্তাহে টোকিওতে বাংলাদেশ-জাপান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও তার অনুপস্থিতি নজর কেড়েছিল।

ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ভারতীয় নাগরিক প্রমাণিত হলে তাদের ফেরত নিতে হবে। তবে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত পুশব্যাক নীতি অনুসরণ করি না। এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”


টিসিবির ঈদ কার্যক্রম: কাল থেকে পণ্য বিক্রি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে

ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ, ডাল, চিনি, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করবে সংস্থাটি। স্বল্প আয়ের মানুষকে সহায়তা করাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য। পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে টিসিবির এই কার্যক্রম সারাদেশজুড়ে চলবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত।


আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের সাধারণ জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার (২২ মে) থেকে আগামী ৩ জুন পর্যন্ত সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল এবং চিনি বিক্রি করবে। এই সেবা শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিনেও চলবে।

কার্ডধারী ভোক্তাদের পাশাপাশি, এবার সাধারণ মানুষও পরিবার কার্ড ছাড়াই এই ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। তবে কার্ড ছাড়া কেনা পণ্যের দাম হবে তুলনামূলক একটু বেশি, যদিও বাজার দামের চেয়ে তা এখনও কম থাকবে।

টিসিবি জানিয়েছে, দেশের ৬৯০টি ট্রাকে এসব পণ্য প্রতিদিন বিক্রি হবে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় থাকবে ৫০টি, চট্টগ্রামে ২০টি এবং অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে ১০টি করে ট্রাক চালানো হবে।

টিসিবির পণ্য :ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে

ভোক্তারা একজন সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল, দুই কেজি ডাল ও এক কেজি চিনি কিনতে পারবেন। প্রতি লিটার তেল ১৩৫ টাকা, ডাল ৮০ টাকা এবং চিনি ৮৫ টাকায় বিক্রি হবে। কার্ডধারীদের জন্য এই দাম যথাক্রমে ১০০, ৬০ ও ৭০ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে টিসিবি সারা বছর ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।


আজ থেকে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু

“বাংলাদেশ রেলওয়ে আগাম ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। যাত্রীরা এখন নির্ধারিত সময়ের আগেই তাদের কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের টিকিট কিনতে পারবেন। এই সুবিধা পেতে অনলাইন বা কাউন্টার থেকে টিকিট বুকিং করা যাবে। ভ্রমণ পরিকল্পনা সহজ করতে এবং যাত্রী চাপ কমাতে রেলওয়ের এই উদ্যোগ। বিস্তারিত জানুন আমাদের প্রতিবেদনে।”


ঈদুল আজহায় ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু, জানুন বিস্তারিত
বাংলাদেশ রেলওয়ে আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহার দিন ধরে আজ বুধবার (২১ মে) থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। প্রথম দিনেই ৩১ মে যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করেছেন যাত্রীরা।

টিকিট বিক্রির সময়সূচি:

  • পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা): সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা
  • পূর্বাঞ্চল (ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম): দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা

টিকিট বিক্রির ক্যালেন্ডার:
২১ মে – ৩১ মে
২২ মে – ১ জুন

২৭ মে – ৬ জুন

ফিরতি টিকিট:
৩০ মে থেকে শুরু হবে ৯-১৫ জুনের ফিরতি টিকিট বিক্রি।

অনলাইন টিকিট কাটার সহজ পদ্ধতি:
১. railapp.railway.gov.bd-এ রেজিস্ট্রেশন করুন
২. লগইন করে ভ্রমণের তারিখ, স্টেশন ও শ্রেণি নির্বাচন করুন
৩. ফাইন্ড টিকিট ক্লিক করে পছন্দের ট্রেন বেছে নিন
৪. পেমেন্ট সম্পন্ন করে টিকিট ডাউনলোড করুন

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • একজন সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন
  • টিকিট ফেরতযোগ্য নয়
  • স্ট্যান্ডিং টিকিট শুধু স্টেশন কাউন্টার থেকে পাওয়া যাবে

এনবিআর নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি দূর হয়েছে

এনবিআরকে ঘিরে তৈরি হওয়া ভুল বোঝাবুঝি আলোচনার মাধ্যমে দূর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সফল সমঝোতার ফলে সংকট কেটে গেছে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে এবং এনবিআর কর্তৃপক্ষও নতুন করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে দ্রুত।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ে আগে যে বিভ্রান্তি ছিল, তা এখন নিরসন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, এনবিআরের দুটি বিভাগে বিভক্ত থাকার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটিই বহাল থাকবে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে এনবিআরের কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তবে এ বিষয়ে তিনি আরও কিছু বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বৈঠক শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, অর্থ উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা কর্মকর্তাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ সংক্রান্ত আলোচনায় এনবিআর সংস্কার কমিটি এবং কর ও কাস্টমস ক্যাডারের প্রতিনিধিরা তাঁদের মতামত ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উপস্থাপিত মতামতগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে পৃথক করে দুটি বিভাগ গঠন করা হয়—একটি ‘রাজস্ব নীতি’, অন্যটি ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ বিভাগ। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মকর্তারা টানা চার দিন কলম বিরতি পালন করেন।


১৯৭১ সালের মে মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন প্রস্তুতির দলিল

১৯৭১ সালের মে মাস ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির এক গৌরবময় অধ্যায়। দামাল ছেলেরা তখন দেশমাতৃকার জন্য জীবনপণ লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গোপনে চলছিল প্রশিক্ষণ, সংগঠন ও পরিকল্পনা। এই সময়কালই স্বাধীনতা অর্জনের পথে বীরযোদ্ধাদের দৃঢ় সংকল্প ও সাহসিকতার এক উজ্জ্বল প্রমাণ হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়।


মে মাসের শুরুতে স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা দৃশ্যপট

মে মাসের প্রথম দিন ব্রিটিশ এমপি ব্রুস ডগলাস-ম্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সফর শেষে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এছাড়া তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ করার আবেদনপত্রও পাঠান। একই দিনে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা ‘প্রাভদা’ পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবিক সংকটের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কার্যক্রমকে সমালোচনা করে উল্লেখ করে, এর প্রভাব শুধু পূর্ব পাকিস্তান নয়, গোটা এশিয়া এবং বিশ্বেও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।

ইংল্যান্ডের উরস্টার শহরে প্রায় ছয়শ প্রবাসী বাঙালি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম ম্যাচের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীরা নানা ধরণের প্ল্যাকার্ডে দাবি উপস্থাপন করে। অন্যদিকে, দেশের অভ্যন্তরেও পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া কিছু ব্যক্তির বক্তব্য উঠে আসে, যেমন ময়মনসিংহের প্রাদেশিক সদস্য সৈয়দ বদরুজ্জামান, যিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করলেও ৫ মে পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে তিনি জীবিত ও সুস্থ আছেন। এই খবর বাঙালি জাতির মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সাহস জোগায়।

পাকিস্তানি সেনারা সারাদেশে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন চালায়, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শান্তি কমিটির সদস্যরা। তারা মূলত বাঙালিদের নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করেছিল। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বেশি নির্যাতন সংঘটিত হয়। পরে ১৬ মে শান্তি কমিটির নাম পরিবর্তন করে ‘শান্তি ও সংহতি কমিটি’ করা হয় এবং তার সদস্যদের তালিকা ঘোষণা করা হয়।

মে মাসে পাকিস্তানি সেনাদের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা ঘটে খুলনার ডুমুরিয়া থানার আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর এলাকায়, যেখানে প্রায় ১২ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া নাটোরের লালপুরে ৪৬ জন কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যা ‘শহীদ সাগর’ নামে পরিচিত পুকুরের পুকুরপাড়ে সংঘটিত হয়।

এ সময় বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ পক্ষের জনমত গড়ে ওঠে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান ভারতীয় শরণার্থীদের পাশে থাকার কথা বলেন এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রেও পাকিস্তানে সামরিক সাহায্যের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে। মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি উদ্বাস্তু সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপের আবেদন জানান।

মে মাসেই ভারতে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, যেমন বিহারের চাকুলিয়া ক্যাম্পে ও নৌ-কমান্ডোদের হাতিমারা ক্যাম্পে। এই প্রশিক্ষণে দেশপ্রেমিক তরুণরা কঠোর শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেন স্বাধীনতার জন্য।

১৯৭১ সালের মে মাসে পাকিস্তানি সেনারা ভয়াবহ গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে বাঙালির ওপর নিষ্ঠুরতা চালায়, তবে বাঙালি যুবকদের শক্তি ও সাহস তাদেরকে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়।


ইউনিফর্ম পরে এসেছি, আমি কাপুরুষ নই, সেনা কর্মকর্তার বার্তা

চাকরিচ্যুত সাবেক সেনাসদস্যদের উদ্দেশে এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, “আমি ইউনিফর্ম পরে এসেছি, আমি কাপুরুষ না।” তাঁর এই সাহসী ও প্রত্যয়ী বক্তব্য ঘিরে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। মন্তব্যটি সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ এবং নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে। বিস্তারিত জানুন এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া।


চাকরি পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি আদায়ে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সশস্ত্র বাহিনী থেকে অবসর বা চাকরিচ্যুত একদল সাবেক সদস্য। রোববার (১৮ মে) সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা সারাদিন ধরে প্রেসক্লাব এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছেন।

দাবিদারদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে বিকেলে প্রেসক্লাবে পৌঁছান সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আলোচনার পর তাঁরা প্রস্থান করতে চাইলে আন্দোলনকারীরা তাঁদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন, ফলে কর্মকর্তারা স্থান ত্যাগ করতে পারেননি।

এ সময় এক সেনা কর্মকর্তা শান্ত স্বরে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন,
“আমি ইউনিফর্ম পরে এসেছি, কাপুরুষ নই। এই পোশাকের একটি সম্মান রয়েছে। যদি মৃত্যু হয়, এখানেই হবো, যদি বাঁচি, এখানেই থাকবো। আপনারা দয়া করে এমন কাজ করবেন না। আমি কেন গাড়ি চালিয়ে দেব আপনাদের উপর?”

পরে তিনি আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজন প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করেন, যাঁরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য মনোনীত হবেন।

এই ঘটনার মাধ্যমে আন্দোলনের উত্তাপ স্পষ্ট হলেও, উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ খোলা রয়েছে বলে ধারণা করা যায়।


Exit mobile version