মুনীরুজ্জামান: তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার রাখে না

জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মুনীরুজ্জামান মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে না সংবিধানে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা। তিনি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য হুমকি হতে পারে। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের দায়িত্ব সীমিত ও নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। তাঁর এ বক্তব্য নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।


বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সংবিধানে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনা উচিত নয়। তাঁর মতে, শুধুমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই সংবিধান পরিবর্তনের এখতিয়ার রাখেন; অন্য কারও সে অধিকার নেই।

রবিবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মুনীরুজ্জামান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, যেসব বাস্তব সংস্কার সম্ভব, কেবল সেগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। এর বাইরে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের একটি মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্রে ফেরার পথ সুগম করা। তাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গণতন্ত্রের দিকে দ্রুত ও কার্যকর অগ্রসর হওয়া।

বর্তমান সরকারের ওপর অতিরিক্ত সংস্কারের দায়িত্ব চাপানোও যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, শুধু এমন সংস্কার করা উচিত যা রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে টেকসই হবে, অন্যথায় তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। অতীতে যেসব সংস্কার হয়েছিল, সেগুলোর অনেকই টেকেনি, ফলে বাস্তবমুখী ও গ্রহণযোগ্য সংস্কার জরুরি।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান এবং নাগরিক সমাজের ১১ জন প্রতিনিধি।


ছাত্র উপদেষ্টা মানেই এনসিপি নয়, স্পষ্ট করলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

হাসনাত আবদুল্লাহ স্পষ্ট করেছেন, দুই ছাত্র উপদেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন না, বরং তারা গণ-আন্দোলনের মুখপাত্র। এনসিপির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার গুজব ভিত্তিহীন। এই মন্তব্যে আন্দোলনের নিরপেক্ষতা ও স্বতন্ত্রতা নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম হয়েছে। জনমতের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিয়েই চলেছে বিতর্ক।


অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা—আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম—এর পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে আজ রোববার সকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ মন্তব্য করেন, এই উপদেষ্টারা মূলত গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্ব করছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। তাঁদের দলীয় পরিচয়ে সংযুক্ত করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

Images By: Voice 7 News

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার পথসভা শুরুর আগে নগরীর দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এই দুই ছাত্র উপদেষ্টার অবস্থান সম্পর্কে শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এনসিপি মনে করে, তাঁদের প্রতি সম্মান বজায় রাখা জরুরি এবং তাঁদের বারবার দলীয় পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত করাটা অনুচিত।

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবেই, তবে সংকটময় সময়ে আমরা সব রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি—এটাই জাতীয় ঐক্যের চিত্র। অতীতে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সময়ও গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব শক্তি একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে।

পথসভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার, সংবিধান সংস্কার, নতুন নির্বাচন ব্যবস্থা ও শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন নিয়ে জনগণের মতামত জানতেই এই কর্মসূচি। তিনি জানান, এসব বিষয় ইতোমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, এবং জাতীয় রোডম্যাপ দ্রুত প্রকাশের দাবি তোলা হয়েছে।

আজকের দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, দোহাজারী, চন্দনাইশ, পটিয়া ও বোয়ালখালীতে পথসভা। এসব আয়োজনে হাসনাত আবদুল্লাহ ছাড়াও উপস্থিত আছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক।


নজরুলের নাম আজও সমুজ্জ্বল সূর্যের আলোর মত: ২৫ মে, নজরুলজয়ন্তীতে বাংলাদেশের শ্রদ্ধার উৎসব

হাঁটছি বাংলা একাডেমির আঙিনায়, আজকের সূর্যটা যেন একটু বেশি আলো ছড়াচ্ছে। শহরের বাতাসে এক মুগ্ধতার মৃদু সুর মিশেছে—”চল্ চল্ চল্, উর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল…”। আজ নজরুলজয়ন্তী। বিদ্রোহের কবির জন্মদিন। কবিতার খুঁটিনাটিতে, সুরের শিল্প-ছবিতে, তবলার তালে তালে—নজরুলের কথা আজও জেগে থাকে। ঠিক ১৩০ বছর আগে, ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ২৫ মে) জন্মেছিলেন তিনি, কুমিল্লার চৌগাছা গ্রামে, একটি মসজিদের পাশে।

বাঙালি আজও তাকে মনে করে—যিনি ভাষায় বিদ্রোহ শিখিয়েছেন, শিখিয়েছেন ভালোবাসার ফুল ফোটাতে, দেখিয়েছেন শব্দের আগুন জ্বালাতে কবিতার পাতাতে এবং অসাধারণ লিখনীতে।আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় চত্বরে

চত্বরে মানুষের ঢল। কবির প্রতিকৃতিতে মালা পরাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, শিক্ষকরা, কবিতা পাঠ করছেন শিশুরা। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সকাল ৯টার খবর:
“জাতীয় পর্যায়ে নজরুলজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।”
শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে নজরুল সঙ্গীত প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে নজরুল ইন্সটিটিউটে আলোচনা সভার উদ্বোধন করেছেন।

আজকের দিনে বিশেষ নজর পড়ছে নজরুলের চিরন্তন গানগুলোতে। বেতার থেকে ভেসে আসছে “কারার ঐ লৌহ কপাট…”—শ্রোতা মন ছুঁয়ে যাচ্ছে সেই বিদ্রোহের সুর।

অন্যদিকে নজরুল জন্মভূমি কুমিল্লার মাটিতেও সকাল থেকেই লোকারণ্য। মসজিদে কোরআন খতম, মাজারে ফাতেহা পাঠ, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কুমিল্লার ডিসি অফিস জানিয়েছে, আজ সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়েছে আলোচনা সভা, দুপুর ১২টায় চলছে নজরুল সঙ্গীত প্রতিযোগিতা।

আজকের দিনে স্মরণ করছি নজরুলের সেই অমোঘ বাণী:
“আমি চির বিদ্রোহী বীর, বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা…”
আজও তাই কবি, তুমি আমাদের বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা, প্রেমের দ্যুতি, আর জাতীয় সত্তার বাতিঘর।

নজরুলজয়ন্তীর এই দিনে বাঙালি কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে একটাই কথা:
“বিদ্রোহী কবির গান থেমে যাবে না, তার আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।”


মানবিক বিপর্যয়ে গাজা, খাবারের জন্য পথে নেমেছে জনতা

গাজায় চলছে তীব্র খাদ্য সংকট ও ত্রাণের ভয়াবহ ঘাটতি। ক্ষুধার তাড়নায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে, বাড়ছে সহিংসতা ও লুটপাট। শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা পড়েছে চরম বিপদে। আন্তর্জাতিক সহায়তা পৌঁছাতে ব্যর্থ, জনমানুষের বেঁচে থাকা এখন বড় প্রশ্ন। গাজা এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।


জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সংকট মোকাবিলায় দ্রুত অতিরিক্ত খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। সহায়তা বহনকারী ট্রাকগুলো পথে লুটপাটের মুখে পড়ায় খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েল গাজায় সাহায্য রক্ষাকারীদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে, যেখানে ছয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানায়, গাজাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। তারা সতর্ক করেছে, নিরাপদ ও ধারাবাহিক সহায়তা পৌঁছানো না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা UNRWA প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, গাজার বর্তমান অবস্থা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। বর্তমানে যে পরিমাণ সহায়তা প্রবেশ করছে, তা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। তার মতে, সহায়তার অনেক অংশ লুটপাট হচ্ছে বা নিরাপত্তার অভাবে আটকে যাচ্ছে।

গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। অবশেষে এই সপ্তাহে প্রথমবারের মতো কিছু সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়। ইসরায়েল দাবি করেছে, সোমবার থেকে ৩০০টির বেশি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।

এদিকে লন্ডনে, ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের প্রতিবাদে এবং যুক্তরাজ্যের ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন’ (PSC) আয়োজিত এ কর্মসূচিতে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানানো হয় এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্দশায় যুক্তরাজ্যের সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।


Exit mobile version