ঠিকাদারি নিয়ে রাজশাহী ও নওগাঁর দুই বিএনপি নেতার ফোনালাপ ফাঁস

রাজশাহী ও নওগাঁর দুই বিএনপি নেতার মধ্যে ঠিকাদারি বণ্টন নিয়ে হওয়া ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। কথোপকথনে দেখা যায়, তারা লাভ ভাগাভাগি ও প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনায় লিপ্ত। এই অডিও ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বইছে, যা দুর্নীতি ও স্বার্থসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আরও ঘনীভূত করেছে।


রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানার সদ্য সাবেক বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান রুবেল সম্প্রতি একটি ফোনালাপে নওগাঁ জেলার এক ঠিকাদারকে হুমকি দিয়েছেন। সোমবার দুপুরে ৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের এই কথোপকথনে তিনি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেন। যার অপরপক্ষ ছিলেন মান্দা উপজেলার সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ইউনিয়ন বিএনপির প্রাক্তন সদস্য শাহজাহান আলী।

ঘটনার সূত্রপাত রাজশাহীর সড়ক ও জনপথ বিভাগের বৃক্ষপালন শাখার একটি দরপত্রকে কেন্দ্র করে। জানা গেছে, ৯টি লটে গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হলে শাহজাহান দুটি লটের কাজ প্রায় ছয় লাখ টাকায় পান। তিনি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে টেন্ডার জমা দেন, যাতে স্থানীয় চক্রের নিয়ন্ত্রণ এড়ানো যায়।

ফোনালাপে মাহবুবুর বলেন, “১৭ বছর খাইনি, এখন খাব। রোডসে টেন্ডার দিবেন না।” শাহজাহান উত্তর দেন, “আমিও ১৬ বছর পর কাজ পেলাম।” এরপর মাহবুবুর উত্তেজিত হয়ে কটু ভাষায় কথা বলেন। এসময় আরেক ব্যক্তি, হারুন নামে নিজেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবীরের ভাই পরিচয় দিয়ে, শাহজাহানকে দ্রুত দেখা করার জন্য চাপ দেন।

শাহজাহান বলেন, “আমি আসব, তবে আগে লট কাটি, তারপর তো টাকা আসবে।” হারুন তখন বলেন, “ঈদের আগেই সব মিটমাট করতে হবে।” এই কথোপকথনে প্রকাশ পায় রাজনৈতিক প্রভাব ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাত ও ক্ষমতার খেলা।


রাজশাহীর প্রাক্তন মেয়রের পিএ ওয়াহেদ গ্রেপ্তার, ঘটনাস্থল নওগাঁ

রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) ওয়াহেদকে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের কারণ এখনও বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক সংযোগ ও প্রশাসনিক অনিয়মের সম্ভাবনার কথা উঠছে। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজনে তাকে রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হতে পারে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, যা আরও আলোচনা ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।


নওগাঁয় গ্রেফতার: লিটনের সাবেক সহকারী ও বিএনপি নেতা আটক

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অভিযান চালিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) আবদুল ওয়াহেদ খান টিটুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে চাকরাইল চৌধুরীপাড়া গ্রামের এক বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। একই অভিযানে স্থানীয় বিএনপি নেতা সাগর চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

আবদুল ওয়াহেদ খান রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। রুয়েটের সেকশন অফিসার থাকা অবস্থায় তিনি পাঁচ বছর লিটনের পিএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যার ফলে তিনি দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে সমান্তরালভাবে বেতন নেওয়ার অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত সাগর চৌধুরী নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি এবং স্থানীয় বিএনপি নেতা। তাকে আক্তার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে আরেফিন সিদ্দিকীর অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

[আরোও পড়ুনঃযমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা] [ইউটিউবে খবর দেখুন]

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওয়াহেদ খান জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পিস্তল হাতে গুলিবর্ষণ করে ভাইরাল হওয়া জহিরুল হক রুবেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। দুজনের বিরুদ্ধেই কিশোর গ্যাং লালন, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে ওয়াহেদ খানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়, যার একটি হত্যা মামলা।

বদলগাছী থানার তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, “সাগর চৌধুরীর সঙ্গে ওয়াহেদের আত্মীয়তার সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাগর চৌধুরীর বিরুদ্ধেও আশ্রয়দানের মামলা দায়ের করা হবে।”


Exit mobile version