ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষতিপূরণ বাদ পড়েছে পাকিস্তানের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে | একদেশ পত্রিকা

পাকিস্তানের সাম্প্রতিক দাপ্তরিক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের প্রতি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা বা যুদ্ধক্ষতিপূরণের কোনো উল্লেখ নেই বলে জানা গেছে। এই ঘোষণায় ১৯৭১ সালের ঘটনাবলি সম্পর্কে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করা হলেও ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষতিপূরণের মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বিরোধের ক্ষেত্রে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত করতে পারে।

Call for Ad – Banner
Call for Ad+88 01400 84 0008
ছবি: ইন্টারনেট

বিজ্ঞাপন বিহীন সংবাদ পড়তে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো দিন, একদেশ নিউজ খবর পেতে গুগল নিউজইউটিউব চ্যানেল ফলো করুন


প্রায় ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া এবং দেশটির কাছে আটকে থাকা সম্পদ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে প্রচার করা হয়। তবে বৈঠকের একদিন পর শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষমা চাওয়া ও সম্পদের মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলোর কোনো উল্লেখ দেখা যায়নি।

বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানের ওপর জোর দেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ বৈঠকে ’৭১-এর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের কাছে ক্ষমা চেয়েছে এবং পাকিস্তান ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার ফেরত চেয়েছে এবং এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘অমীমাংসিত বিষয়’ নিয়ে জোরদার প্রচার করা হলেও, পাকিস্তান সেদিন কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে বৈঠকের একদিন পর, শুক্রবার, পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন করে শুরু করার যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়, গাজায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে ‘ভারতের অবৈধ দখল’ হিসেবে উল্লেখ করে এর সমাধানের মতো বিষয়গুলো ঢাকা বৈঠকে আলোচিত হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ‘গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া বা অর্থ ফেরত’ প্রসঙ্গে কোনো কথা সেই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।

যদিও পাকিস্তান তাদের বিজ্ঞপ্তিতে অতীতের ‘অমীমাংসিত বিষয়গুলোর’ তুলনায় ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইসলামাবাদের বিবৃতিতে ঢাকা ও ইসলামাবাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, অভিন্ন ইতিহাস এবং জনগণের পারস্পরিক আকাঙ্ক্ষার কথা উঠে এসেছে। পাকিস্তান তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে, ‘বৈঠকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’

শুক্রবার প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে পাকিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের কথাও উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি, সম্পর্কের গতিশীলতা বজায় রাখতে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ, অনিষ্পন্ন চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করা এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে পাকিস্তান।

এছাড়াও, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবের কথাও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে পাকিস্তান জানিয়েছে। একইসঙ্গে, বিজ্ঞপ্তিতে দুই দেশই কানেক্টিভিটিকে (যোগাযোগ) অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে।


Exit mobile version