রাজধানীর ঐতিহাসিক উদ্যানে মাদকের আড্ডা, প্রতিদিন ৪০ কেজি গাঁজা বিক্রি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক কার্যক্রমের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। প্রতিদিন ৪০ কেজি গাঁজা বিক্রির ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিস্তারিত জানুন এই রিপোর্টে।


রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যা নগরবাসীর কাছে প্রকৃতির কাছে সময় কাটানোর অন্যতম স্থান হিসেবে পরিচিত। এর আশপাশে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, আর পাশেই শাহবাগ থানা। একসময় এটি নগরবাসীর কাছে নিরাপদ মনে হলেও, পর্যাপ্ত নজরদারি ও সঠিক তদারকির অভাবে স্থানটি ধীরে ধীরে মাদকসেবী ও মাদককারবারিদের নিরাপদ আস্তানায় রূপ নেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর উদ্যানটির অন্ধকার দিকগুলো প্রকাশ্যে আসে। ১৩ মে রাত ১২টার দিকে মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী শাহরিয়ার, যিনি স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

গবেষণায় উঠে এসেছে, উদ্যানে সক্রিয় ছিল তিনটি বড় মাদক চক্র—যাদের নেতৃত্বে ছিলেন মেহেদী, পারুলী আক্তার ও নবী। তাদের অধীনে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ কেজি গাঁজা বিক্রি হতো। চক্রগুলো এলাকা ভাগ করে নিয়েই ব্যবসা চালাত। আরও জানা গেছে, ফারুক নামে আরেক ব্যক্তি একই কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। গাঁজাগুলো ছোট ছোট পুরিয়া বানিয়ে বিক্রি করা হতো এবং এই ব্যবসায় সরাসরি জড়িত ছিল প্রায় পঞ্চাশজন।

এই অপরাধচক্র শুধু গাঁজা নয়, সীমিত আকারে হেরোইন ও ইয়াবাও বিক্রি করত। অনেক তরুণ-তরুণী সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে মাদক সেবনে জড়াত। দিনের বেলায় উদ্যান এলাকায় বিভিন্ন খাবারের দোকান ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়িক স্থাপনাও গড়ে উঠেছিল, যা অপরাধীদের আড়াল দিত।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, শুধু মাদক নয়, এখানে সক্রিয় ছিল মোটরসাইকেল চোরচক্র, ছিনতাইকারী গ্যাং ও ব্ল্যাকমেইলিং চক্র। প্রেমিক যুগলদের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নিত তারা। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ধারী কিছু তরুণ, যারা মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নামও ব্যবহার করত।

শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৫ মে অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এর মাধ্যমে উদ্যানে নতুন করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।


Exit mobile version