ছাত্রদল নেতার খুন: রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাকি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব?

ছাত্রদল নেতা সাম্যর নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। কে বা কারা এই হত্যায় জড়িত তা এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনার গভীরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। রাজনৈতিক সংঘর্ষ, ব্যক্তিগত বিরোধ—সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রহস্য উদ্ঘাটনের অপেক্ষায় সবাই।


আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম প্রায় অনুপস্থিত ছিল। ক্যাম্পাসের প্রশাসন, ক্লাসরুম এবং আবাসিক হলগুলোতেও তাদের দাপট ছিল প্রবল। সেই সময়ের ছাত্রলীগের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক দফা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করে, যার ফলস্বরূপ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ সরকার।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে শিক্ষার্থীরা আশা করেছিল শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল ক্যাম্পাস পরিবেশে ফিরে যাবে। সরকার সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য নিয়োগ দিলেও, গত ৯ মাসে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন, বিক্ষোভ এবং কর্মবিরতির ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য খুন হন। তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষত ফেসবুকে তাঁর দেওয়া এক পোস্টকে ঘিরে। ছাত্রদল দাবি করেছে, এ হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত। এর আগে জানুয়ারিতে ফজলুল হক হলে তোফাজ্জল নামের এক যুবক নিহত হয়।

[আরোও পড়ুনঃ নদীতে মিলল দাদি-নাতনির নিখোঁজ লাশ] >> [ইউটিউবে খবর দেখুন]

এই ঘটনার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন। উপাচার্য ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ তাঁদের উপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষকসহ অন্তত ১১ জন আহত হন। একই সময়ে কিছু সংগঠন যমুনার সামনে সভা করে দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়, যা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষার দাবি আদায় না হওয়ায় তারা আরও কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় এখনো অচলাবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষকেরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের একাংশ ৩৭ শিক্ষার্থীকে শোকজের প্রতিবাদে আন্দোলনে রয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। অবশেষে সরকার তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

[আরোও পড়ুনঃ লংমার্চে পুলিশের কড়া অভিযান] >> [ইউটিউবে খবর দেখুন]

সরকার যদি বরিশালের মতো অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটেও দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে শিক্ষাক্ষেত্রে অচলাবস্থা আরও গভীর হতে পারে।


Exit mobile version