গাবতলী: বিএডিসির মূল্যবান জমি দখলে, অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণ

রাজধানীর গাবতলীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের জমি জবরদখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এই দখলের ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে। সরকারি সম্পত্তি বেদখল হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিস্তারিত জানতে খবরটি পড়ুন।


গাবতলীতে প্রভাবশালী মহলের দৌরাত্ম্য, বিএডিসির ১০০ কোটি টাকার জমি ট্রাকস্ট্যান্ডে পরিণত

ঢাকার গাবতলীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ উৎপাদন খামারের প্রায় তিন বিঘা মূল্যবান জমি জবরদখল করে নিয়েছে আন্তজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন। প্রাথমিকভাবে এক বিঘা জমি দখল করা হলেও, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দখলের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন বিঘায়, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বিএডিসির কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, সময়ের সাথে সাথে দখলের পরিধি আরও বাড়তে পারে।

[পড়ুন – আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের শীর্ষ শিরোনাম ]

বিএডিসি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, বেদখল হওয়া জমিটি গাবতলীর মাজার রোডে অবস্থিত বীজ উৎপাদন খামারের অভ্যন্তরে। পূর্বে এই জমি পাঁচ বছরের জন্য ঢাকা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে মালামাল রাখার জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল, যার মেয়াদ গত বছরের জুনে শেষ হয়। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জমিটি বিএডিসিকে ফেরত না দেওয়ায় এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে দখলদাররা।

বিএডিসির কর্মকর্তারা আরও জানান, গত ২৩শে মার্চ আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা সরকারি দেয়াল ভেঙে প্রায় এক বিঘা জমি দখল করে নেয়। তৎক্ষণাৎ দারুস সালাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও, শুরুতে আগ্রহ দেখালেও পরবর্তীতে থানা পুলিশ কোনো প্রকার সহযোগিতা করেনি। এই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দখলদাররা আরও বেশি জমি দখলের দুঃসাহস দেখিয়েছে। ১৬ই এপ্রিল সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তারা প্রায় তিন বিঘা জমি বেদখল হওয়ার প্রমাণ পান এবং বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেট্রোরেল কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের প্রধান ফটকের পশ্চিমে মসজিদ সংলগ্ন সরকারি দেয়াল ভেঙে একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে এবং সেই পথ দিয়ে দখলকৃত জমিতে সারি সারি ট্রাক পার্ক করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক জানান, জমিটি অব্যবহৃত থাকায় তারা এখানে ট্রাক রেখেছেন।

মিরপুর বীজ উৎপাদন খামারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান খান জানান, কিছু ব্যক্তি খামারের জমি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছে এবং কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তায় দখলের পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিষয়টি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।

বিএডিসির সূত্র জানায়, ১১৭.০৮ একরের বিশাল মিরপুর বীজ উৎপাদন খামারটি ১৯৫৭ সালে অধিগ্রহণ করা হয়। অতীতেও এই খামারের জমি দখলের চেষ্টা হয়েছে, ২০১৬ সালে একটি ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়েছিল এবং ২০১৮ সালে নার্সারির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ট্রাকস্ট্যান্ড তৈরির চেষ্টাও ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছিল।

আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক আলাউদ্দিন দাবি করেন, এই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাকস্ট্যান্ড ছিল এবং মেট্রোরেলকে ইজারা দেওয়ার পর সেটি সরানো হয়। বর্তমানে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই কেন্দ্রীয় কমিটির সহায়তায় পুনরায় ট্রাকস্ট্যান্ড স্থাপন করেছেন, কারণ জমিটি বিএডিসির কোনো কাজে আসছে না। তিনি আরও জানান, ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি কফিল উদ্দিনসহ সকলের সম্মতিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে, আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও হানিফ পরিবহনের মালিক কফিল উদ্দিন এই জমি দখলের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।

মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন ৬-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও জমিটি কাউকে হস্তান্তর করা হয়নি এবং ভবিষ্যতে অন্য প্রকল্পের জন্য এটির প্রয়োজন হবে। সরকারি জমি পরিবহন নেতাদের কাছে হস্তান্তরের কোনো প্রশ্নই ওঠে না এবং তারা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন।

বিএডিসির কর্মকর্তারা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকারি সম্পত্তি দখলের ঘটনা জানানোর পরেও পুলিশ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শুরুতে গুরুত্ব দিলেও, পরিবহন নেতাদের সাথে বৈঠকের পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তবে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিব-উল-হোসেন জানান, জিডির তদন্ত চলছে এবং এটি অধর্তব্য অপরাধ হওয়ায় দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য বিএডিসিকে আদালতের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। অনুমতি পেলে পুলিশ সহায়তা করবে।

বিএডিসির কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকার কারণে সরকারি জমি দখলের বিষয়টি জানার পরেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।


Exit mobile version