ভয়াবহ দুর্ঘটনা: চাকার সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে তরুণীর মৃত্যু

আজরাত সাদিয়ার এই মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের সবার জন্য একটি বড় শিক্ষা। সড়ক ব্যবহারের সময় সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই ঘটনায় শুধু একটি পরিবারই শোকাহত হয়নি, পুরো সমাজই এক তরুণ প্রাণের অকাল মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং পরিবারটির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।


আফতাবনগরে অটোরিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে তরুণীর মর্মান্তিক মৃত্যু

রাজধানীর রামপুরা থানার আফতাবনগর এলাকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আজরাত সাদিয়া (২৩) নামে এক তরুণী নিহত হয়েছেন। সোমবার (৫ মে) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে অটোরিকশার চাকায় তার গলার ওড়না পেঁচিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দুপুর সাড়ে ১২টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

নিহত সাদিয়া কিশোরগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার ভাই মো. তানজিম নওশাদ জানান, সাদিয়া আফতাবনগরে অবস্থিত একটি পাসপোর্ট অফিস থেকে কাজ সেরে অটোরিকশায় করে কালাচাঁদপুরে তার বোনের বাসায় যাচ্ছিলেন। আফতাবনগর গেটের কাছে পৌঁছালে হঠাৎ তার গলার ওড়না অটোরিকশার চাকায় পেঁচিয়ে যায়। এতে তার গলায় শক্ত ফাঁস লাগে এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়েন।

স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে নিকটস্থ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাদিয়ার স্বজনরা জানান, দুর্ঘটনার সময় রিকশাচালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

নিহতের ব্যক্তিগত তথ্য

সাদিয়া কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নিউটাউন এলাকার মো. আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে। তিনি রাজধানীর সবুজবাগের বাসাবো বউবাজার এলাকায় স্বামী তৌকির আহমেদের সঙ্গে বসবাস করতেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, সাদিয়া ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও পরোপকারী একজন তরুণী। তার আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবার ও আত্মীয়স্বজন গভীর শোকে নিমজ্জিত।

প্রশাসনিক পদক্ষেপ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক মিয়া ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সাদিয়ার মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি রামপুরা থানায় জানানো হয়েছে। থানা পুলিশ দুর্ঘটনাটি তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে।

সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

এই ঘটনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নারী নিরাপত্তা ও অটোরিকশার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোরিকশায় ওড়না বা লুঙ্গির মতো ঢিলেঢালা পোশাক পরা বিপজ্জনক হতে পারে। এ ধরনের পোশাক যেকোনো সময় গাড়ির চাকায় পেঁচিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

পরিবারের প্রতিক্রিয়া

সাদিয়ার ভাই তানজিম নওশাদ পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিস্তারিত বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি জানান, পরিবার এই দুর্ঘটনার জন্য রিকশাচালককে দায়ী করছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, তারা নিহতের জন্য ন্যায়বিচার চান এবং এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা ও শোক প্রকাশ করা হচ্ছে। অনেক নেটিজেন অটোরিকশায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে সরকারের কাছে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

[আরোও পড়ুনঃসীমান্ত হত্যাকাণ্ড]

আজরাত সাদিয়ার এই মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের সবার জন্য একটি বড় শিক্ষা। সড়ক ব্যবহারের সময় সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই ঘটনায় শুধু একটি পরিবারই শোকাহত হয়নি, পুরো সমাজই এক তরুণ প্রাণের অকাল মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং পরিবারটির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।


Exit mobile version