কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এক গৃহবধূকে শিকল দিয়ে বেঁধে পাশবিক ধর্ষণ ও নির্যাতনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এই নৃশংস ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তদন্ত চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন বিহীন সংবাদ পড়তে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো দিন, একদেশ নিউজ খবর পেতে গুগল নিউজ ও ইউটিউব চ্যানেল ফলো করুন
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে স্বামী কর্মস্থলে থাকার সময় এক ২২ বছর বয়সী গৃহবধূ তার নিজ বাড়িতে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী, যার সঙ্গে তার অসুস্থ ৭০ বছর বয়সী শাশুড়ি ও দুই বছর বয়সী কন্যাসন্তান থাকেন, দাবি করেছেন যে দেশি অস্ত্রধারী তিনজন ব্যক্তি জোরপূর্বক তার ঘরে প্রবেশ করে এবং শিকল দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে পাশবিক নির্যাতন চালায়।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী আরও অভিযোগ করেন যে দুর্বৃত্তরা শুধু তাই নয়, ঘর থেকে নগদ টাকা, সোনার গয়না এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। তাদের বর্বরতা এখানেই থামেনি; পালিয়ে যাওয়ার আগে তারা ঘরের কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নাঙ্গলকোট উপজেলার একটি গ্রামে ঘটে। পরদিন, শুক্রবার, ভুক্তভোগী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাওয়ার পর পুলিশ অভিযোগটিকে একটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার মূল অভিযুক্তকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত তরুণের নাম মো. ইমাম হোসেন, যার বয়স ২৪ বছর এবং তিনিও নাঙ্গলকোটের বাসিন্দা। তিনি এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত। মামলায় জাহিদুল্লাহ (২৫) নামে আরও একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও তার বিস্তারিত ঠিকানা জানা যায়নি। ভুক্তভোগী জানিয়েছেন যে ঘটনার সময় ইমাম হোসেনের মুখে তিনি জাহিদুল্লাহর নাম শুনেছেন। মামলার অজ্ঞাতনামা তৃতীয় ব্যক্তি মুখোশ পরিহিত ছিলেন এবং তিনিই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ।
গৃহবধূর অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার মূল হোতা ইমাম হোসেনের পরিবারের সঙ্গে তার স্বামীর পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এই পুরনো শত্রুতার জেরেই তার ওপর এই নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মেলায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে রাতেই ইমাম হোসেনকে তার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাকে কুমিল্লার আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ পুরো বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার এজাহারে গৃহবধূ উল্লেখ করেছেন যে তার স্বামী ঢাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত। গ্রামে তিনি তার অসুস্থ শাশুড়ি ও শিশুকন্যাকে নিয়ে বসবাস করেন। অভিযুক্ত ইমাম হোসেন ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে তাদের পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতা ছিল এবং তারা বিভিন্নভাবে গৃহবধূ ও তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করত। ইমাম হোসেন এর আগেও বেশ কয়েকবার তাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিলেন। ঘটনার রাতে, ইমাম ও দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তি দেশি অস্ত্র, লোহার শিকল ও তালা-চাবি নিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে গৃহবধূর কক্ষে ঢোকে। এ সময় ইমাম হোসেন তার মেয়ের জামা দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে এবং অন্য আসামিদের সহায়তায় ওড়না দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর লোহার শিকল দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে তালা লাগিয়ে দেয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ইমাম হোসেনের সহায়তায় মুখোশ পরিহিত একজন ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে এবং অন্য একজন তার মাথার চুল কেটে দেয়।
গৃহবধূ তার এজাহারে আরও উল্লেখ করেন যে পাশবিক নির্যাতনের পর আসামিরা স্টিলের আলমারি ভেঙে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা, সোনার গয়না এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় ইমাম হোসেন বারবার জাহিদুল্লাহর নাম বলছিল। পরে তার অসুস্থ শাশুড়ির চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।
আজ সকালে নির্যাতিত গৃহবধূ সাংবাদিকদের কাছে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, যখন ঘটনা ঘটে তখন তার মেয়ে ঘুমাচ্ছিল। তিনি বারবার নির্যাতনকারীদের কাছে মিনতি করেছিলেন, কিন্তু তারা তার কোনো কথা শোনেনি এবং একের পর এক অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় তারা আলমারি থেকে কাপড় ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি এই ঘৃণ্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
Read more: গৃহবধূকে শিকল দিয়ে বেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেফতার, কুমিল্লা নাঙ্গলকোট | একদেশ পত্রিকাকান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, যাওয়ার সময় লম্পটরা তাকে হুমকি দিয়ে গেছে যে ঘটনা কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলবে। একজন তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং অন্যরা তার শরীরে খারাপভাবে স্পর্শ করে। তিনি এর কঠিন শাস্তি চান। এমন ঘটনার পর তিনি জীবন্ত লাশের মতো বেঁচে আছেন।