একটি গোপন অডিও রেকর্ডিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে একজন থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) এবং একজন স্থানীয় ব্যবসায়ীর মধ্যে কথোপকথন শোনা যাচ্ছে। এই অডিওতে তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে। অনেকেই এই কথোপকথনের নৈতিকতা ও আইনি দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ঘটনাটি এখন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্তের দাবি উঠেছে। এই অডিও লিক কীভাবে আরও বড় ইস্যুতে রূপ নেয়, তা দেখার জন্য সকলে উদগ্রীব।
গাজীপুরের শ্রীপুরে কর্মরত এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে স্থানীয় ঝুট ব্যবসায়ীর আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম শিকদারের বাড়ি শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রামে। অন্যদিকে, অডিওতে যাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে বলে অভিযোগ, সেই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল, যিনি শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে কর্মরত।
ব্যবসায়ী সেলিম সিকদার অভিযোগ করেছেন, গত ৫ আগস্টের একটি হত্যা মামলায় তাকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তিনি রমজানের ছয় দিন আগে প্রায় এক মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। এর আগে তিনি রিদিশা গ্রুপের ফর্মুলা ওয়ান কারখানায় ঝুট ব্যবসা করতেন। তার দাবি, গ্রেপ্তারের দিন ওসি জয়নাল আবেদীন তার কাছ থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, ঝুট ব্যবসার সময় ওসি প্রতি মাসে তার কাছ থেকে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা চাঁদা নিতেন এবং টাকা না দিলে ব্যবসা করতে বাধা দিতেন। প্রাণের ভয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছিলেন। অডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ওসি বিভিন্ন লোক মারফত তাকে হুমকি দিচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এমনকি, ফেসবুকে লাইভে এসে ওই অডিওটিকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও সেলিম সিকদার সোমবার সকালে এক ভিডিও বার্তায় নিশ্চিত করেছেন।
ডিজিটাল সেলার বিজ্ঞাপন ফ্রি প্রচার
ফাঁস হওয়া ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে টেলিফোনের অন্য প্রান্তে ওসিকে বলতে শোনা যায় যে, তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে সেলিম সিকদারকে কারখানা থেকে ঝুট বের করতে সাহায্য করছেন। ওই মধ্যস্থতাকারীকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিলে সেলিম নির্বিঘ্নে ঝুট পরিবহন করতে পারবেন বলে ওসি তাকে আশ্বস্ত করেন। অডিওর এক পর্যায়ে ওসিকে সেলিম শিকদারের কাছে ফুল হাতা গেঞ্জি চেয়ে নিতেও শোনা যায়।
তবে, শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল অডিও ক্লিপে থাকা কণ্ঠস্বর নিজের নয় বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “এটা আমার নলেজে নাই। সারাদিন ফোনে অনেক মানুষের সাথে কথা বলি। কাজের কথা বলি। কাজের বাইরে কোনো কথা বলি না। অডিওর বিষয়টি আমার নলেজে নাই।”
এই প্রসঙ্গে গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক জানিয়েছেন, “এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কথপোকথনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির সাথে আমাদের কথা বলা দরকার। উনাকে নির্ভয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করছি। উভয়ের বিষয়টি তদন্ত করে সত্য প্রমাণিত হলে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বিজ্ঞাপন বিহীন সংবাদ পড়তে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো দিন, একদেশ নিউজ খবর পেতে গুগল নিউজ ও ইউটিউব চ্যানেল ফলো করুন