অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে অনেকেই স্বর্ণে বিনিয়োগের কথা ভাবেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বর্ণের দাম সাধারণত অস্থির বাজারে স্থিতিশীল থাকে, যা একে নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্প করে তোলে। তবে, এর দাম উঠানামা করতে পারে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে। স্বর্ণে বিনিয়োগের আগে বাজার বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘমেয়াদি লাভের দিকগুলো বিবেচনা করা জরুরি। বিস্তারিত জানুন আমাদের প্রতিবেদনে।
বিজ্ঞাপন বিহীন সংবাদ পড়তে আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো দিন, একদেশ নিউজ খবর পেতে গুগল নিউজ ও ইউটিউব চ্যানেল ফলো করুন
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নজিরবিহীন হারে বাড়ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মুখে অনেকেই স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করে কেনার দিকে ঝুঁকছেন।
ইতিহাস বলছে, অর্থনৈতিক সংকটের সময় এই ধাতুটি বরাবরই একটি নির্ভরযোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই ‘নিরাপদ আশ্রয়’ কি আসলেই ঝুঁকিমুক্ত?
গত শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পরিবর্তনের মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি। তার এই পদক্ষেপের প্রভাবে সম্প্রতি স্বর্ণের দাম এক লাফে বেড়ে ৩১৬৭ ডলারে পৌঁছে যায়। বাণিজ্য যুদ্ধ ও রাজনৈতিক টানাপড়েনের জেরে স্বর্ণের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে একাধিকবার।
প্রতিবারই যখন বাজারে ধস নামে বা বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তখন স্বর্ণ কেনার প্রবণতা বাড়ে। অনেকেই শেয়ার বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে স্বর্ণে বিনিয়োগ শুরু করেন।
বেলফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ড. ফিলিপ ফ্লায়ার্স জানাচ্ছেন, বর্তমান সময়ে স্বর্ণ কিনছেন সরকার, প্রাতিষ্ঠানিক ও খুচরো বিনিয়োগকারীরা। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষ ইক্যুইটি বাজার থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বর্ণকেই আশ্রয় হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। ফলে এর চাহিদা ও দাম—উভয়ই দ্রুত বাড়ছে।
[পড়ুন – আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের শীর্ষ শিরোনাম ]
২০২০ সালের করোনা মহামারির সময়েও দেখা গেছে স্বর্ণের দামে বড় ধরনের উত্থান। তবে এর মানে এই নয় যে স্বর্ণ একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত। কারণ, একই বছর জানুয়ারিতে দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও মার্চের মধ্যেই আবার পতন শুরু হয়।
ড. ফ্লায়ার্স সতর্ক করে বলেন, “নিরাপদ বিনিয়োগ” বললেই তা ঝুঁকিমুক্ত হয় না। স্বর্ণের দাম কখন বাড়বে বা কমবে, তা নির্ভর করে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বাজারের মনোভাবের উপর।
স্বর্ণের প্রতি মানুষের আস্থার পেছনে শুধু বাজারমূল্য নয়, রয়েছে এর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বও। প্রাচীন মিশরের রাজা তুতেনখামুনের সোনার মুখোশ, ভারতের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের সোনার আসন কিংবা ঘানার ঐতিহ্যবাহী গোল্ডেন স্টুল—সবই এর উদাহরণ।
তবে বাসায় থাকা স্বর্ণালঙ্কারের মূল্য ততটা ওঠানামা করে না। কিন্তু বড় বিনিয়োগ করলে তা অনেক সময় বাজারের বড় খেলোয়াড়দের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ড. ফ্লায়ার্স আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ কিনছে রিজার্ভ শক্তিশালী করতে। এ কারণেই দাম বাড়ছে, তবে সেই বাড়তি দাম ধরে রাখা যাবে কি না, তা ভবিষ্যতের বাজার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
সতর্ক বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, স্বর্ণে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদী হলে লাভজনক হতে পারে, তবে তাৎক্ষণিক মুনাফার আশায় এতে ঝাঁপিয়ে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ।