সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী একটি নৌকায় হঠাৎ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। নৌকায় থাকা পর্যটকরা আতঙ্কে পড়ে গেলেও অধিকাংশই নিরাপদে উদ্ধার হন। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তদন্ত চলছে। ঘটনাটির বিস্তারিত জানতে পড়ুন পুরো প্রতিবেদন।
টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী নৌকায় আগুন: ঝুঁকি ও করণীয়
গত ৩০ মে, শুক্রবার সন্ধ্যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি পর্যটকবাহী নৌকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগেও একাধিকবার এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয় পর্যটন ব্যবস্থাপনার এক বড় ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড শুধু সম্পদের ক্ষতিই নয়, পর্যটকদের জীবনের জন্যও হুমকি এবং পুরো পর্যটন খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিচে এই ধরণের অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ এবং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো।
১. গ্যাস সিলিন্ডার ও রান্নার ঝুঁকি
নৌকায় পর্যটকদের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম প্রধান কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রান্নাঘর ছোট এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রাখা, মেয়াদোত্তীর্ণ বা মানহীন সিলিন্ডার ব্যবহার এবং লিকেজ পরীক্ষা না করার ফলে আগুন লাগে।
২. বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট
অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ, ওভারলোডিং এবং সৌরপ্যানেল ও জেনারেটরের ভুল সংযোজন শর্টসার্কিট ঘটিয়ে আগুন ছড়ায়।
৩. সিগারেটের শেষাংশ
ধূমপান শেষে অনেক পর্যটক জ্বলন্ত সিগারেট কাঠের নৌকার ভেতর ফেলেন, যা আগুনের অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়ায়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে হাজারো অগ্নিকাণ্ডের জন্য এই কারণ দায়ী।
৪. খোলা আগুনের ব্যবহার
অনেক সময় নৌকায় পর্যটকরা বারবিকিউ চুলা, আতশবাজি বা ফানুস ব্যবহার করেন, যা পর্যাপ্ত সতর্কতা ছাড়া অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে।
৫. দাহ্য কাঠামো
নৌকার কাঠের গঠন এবং দাহ্য ডেকোরেশন সামগ্রী আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। নৌকার ঘরগুলো সংকীর্ণ হওয়ায় বাতাস চলাচল ও আগুন নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকে না।
🔸 অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বাধ্যতামূলক
প্রতিটি নৌকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ABC টাইপ অগ্নি নির্বাপক রাখতে হবে এবং স্টাফদের সেগুলোর ব্যবহার শিখাতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
🔸 নিরাপদ রান্নার ব্যবস্থা
নির্ধারিত নিরাপদ স্থানে রান্না, গ্যাস সিলিন্ডারের মান যাচাই ও নিয়মিত পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা জরুরি।
🔸 বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা
নিম্নমানের তার ও সংযোগ বন্ধ করে সার্কিট ব্রেকার (MCB) ও লাইসেন্সধারী ইলেকট্রিশিয়ানের মাধ্যমে কাজ করাতে হবে।
🔸 জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা
নৌকার অভ্যন্তরে জরুরি নির্গমন পদ্ধতি দৃশ্যমান স্থানে লিখে রাখতে হবে এবং পর্যটকদের ব্রিফিং ও বছরে অন্তত ২ বার ফায়ার ড্রিলের আয়োজন করতে হবে।
🔸 অগ্নিপ্রতিরোধী নকশা ও কাঠামো
নৌকায় লোহার কাঠামো ব্যবহার উৎসাহিত করা উচিত। কাঠ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্নিরোধক প্রলেপ ব্যবহার করা দরকার।
🔸 লাইসেন্স ও ফিটনেস বাধ্যতামূলক
প্রতিটি পর্যটকবাহী নৌকার লাইসেন্স, সেফটি চেক এবং ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়মিত নবায়ন করতে হবে।
🔸 ফায়ার সেফটি প্রশিক্ষণ
নৌকার চালক, সহকারী, বাবুর্চি—সকলের জন্য ফায়ার সেফটি ও ইমার্জেন্সি প্রশিক্ষণ চালু করতে হবে।