বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, এক রহস্যময় এলাকা যেখানে জাহাজ ও বিমান নিঃশব্দে হারিয়ে যায়। বাহরুল মাহীতের এই গোলকধাঁধা আজও বিজ্ঞানীদের জন্য এক অমীমাংসিত প্রশ্ন। ভূতত্ত্ব, চৌম্বকীয় শক্তি ও কিংবদন্তির ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে হাজারো জল্পনা। জানুন বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের গভীর রহস্য ও হারিয়ে যাওয়া ঘটনার প্রকৃত চিত্র।
নীলাভ আকাশ যখন সমুদ্রের পৃষ্ঠে ভেসে আসে, তখন চোখে পড়ে এক রকমের অপার গভীরতা। কিন্তু এই নীল জলরাশি কি শুধুই জল? না, এখানে আছে কিছু হারিয়ে যাওয়া নিঃশ্বাস, কিছু না-ফেরা যাত্রা, কিছু অচেনা কান্না আর অদৃশ্য এক শূন্যতা। এই অদ্ভুত অনুভবের নামই—বারমুডা ট্রায়াঙ্গল।
ফ্লোরিডা, বারমুডা ও পুয়ের্তো রিকোকে ঘিরে গঠিত এক কাল্পনিক ত্রিভুজ, যা নাবিকদের কাছে পরিচিত “বাহরুল মাহীত” নামে—অর্থাৎ, “সমুদ্রের গহীন স্তর।”
কিন্তু এই গভীরতা কি কেবল ভূগোলের? নাকি এখানে সময়, স্মৃতি আর অতল রহস্যেরও এক প্রবল সঞ্চার?
১৯১৮ সাল।
নিখোঁজ হয় ইউএসএস সাইক্লোপস। onboard ছিলেন ৩০৯ জন। বিশাল লোহার জাহাজটি যেন গিলে নেয় সমুদ্র। কোনো সংকেত, কোনো ধ্বংসাবশেষ… কিছুই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নাসার স্যাটেলাইট ডেটা এবং ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে কিছু চাঞ্চল্যকর ইঙ্গিত। সমুদ্রতলে হঠাৎ মিথেন গ্যাসের বিস্ফোরণ, বিশাল দৈত্যাকার ঢেউ, আর হঠাৎ আবহাওয়ার রূপান্তর—সব কিছুই বাস্তবিক ঘটনা।
ন্যাশনাল ওশেনিক সেন্টার (লন্ডন) জানায়, বারমুডা অঞ্চলে ৩০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার ঢেউ তৈরি হতে পারে। এই ঢেউ আসতে পারে কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই, এবং “গাল্ফ স্ট্রিম” নামের প্রবল স্রোত আবহাওয়াকে করে তোলে আরও অনিশ্চিত ও হঠাৎ।
তবুও, সব প্রশ্ন কি শুধুই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় মিলে যায়?
না, কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়।
পাইলটদের শেষ কথাগুলো, শেষ মুহূর্তের সিগন্যাল, হারিয়ে যাওয়া জাহাজের নীরবতা—সব যেন এক করুণ সংগীতের মত ফিরে ফিরে আসে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল শুধু একটি ভূগোল নয়। এটি এক প্রতীক।
আমাদের অজানা ভয়, হারানোর আতঙ্ক, এবং অজানাকে জানার সেই চিরন্তন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
যারা সাগরে হারিয়ে যায়, তারা শুধু কোনো সংখ্যা নয়—তাদেরও থাকে একটি গল্প, একটি নাম, একটি পরিবার।
আজও বারমুডার জলরাশি গ্রাস করে কিছু নাম, কিছু প্রশ্ন, আর কিছু সম্ভাবনা।
কিন্তু সেই রহস্যময় আঁধারে আলো ছড়ানোই আমাদের দায়িত্ব—জ্ঞান, অনুসন্ধান, এবং মানবিক গল্পের মাধ্যমে।
কারণ, প্রতিটি হারিয়ে যাওয়া নামই ইতিহাসের এক করুণ পঙ্ক্তি। আর যখন গল্পগুলো হারিয়ে যায়, ইতিহাস তখন কাঁদে—নিঃশব্দে।